আমাদের সমাজে এমন অনেক পরিবার এখনো আছে যারা নারীর শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন।মেয়েদের বেশি পড়ালেখা করার কি প্রয়োজন? চাকরি বা ব্যবসার কি প্রয়োজন? প্রতিটা মেয়ে জীবনে একবার হলেও এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। আমি বাকিদের মত বলবো না যে পুরুষরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন এজন্য নারীদের দাবিয়ে রাখতে চান, কারণ উন্নতি যোগ্যতার কাছে ধরা দেয় সে নারী বা পুরুষ চেনে না। এবার এটাও মানতে পারবো না যে কর্পোরেট মহিলাদের চরিত্রে সমস্যা থাকে। কারন আমরা সবাই জানি এক হাতে তালি বাজে না।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি ম্যাচিউর হয়ে থাকে, সেক্ষেত্র থেকে মেয়েরা ছেলেদের থেকে বেশি সংযমী। তাহলে ছেলেরা যদি কর্মক্ষেত্রে নিজেদের চরিত্র অক্ষুন্ন রাখতে পারে তবে মেয়েরা কেন নয়? এবার আসি ধর্মের কথায়,অনেকেই বলে ইসলাম নাকি মেয়েদের অধিকার হরণ করেছে, মেয়েদের আর ছেলেদের সমান অধিকার দেয় নি।
যেখানে মেয়েদের সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হয়েছে সেখানে সমান অধিকার চাওয়া কি বোকামি নয়?মুসলিমরা সবাই জানে যে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। মা অর্থাৎ সকল নারীকে বোঝানো হয়েছে। আর মুসলিমরা নামাজ পড়ে,রোজা রাখে,আল্লাহর যত ইবাদত করে সব বেহেশত পাওয়ার জন্যই। আল্লাহর তরফ থেকে সর্বোচ্চ পুরস্কার।
আর এই বেহেশত আল্লাহ যেই নারীর পায়ের নিচে দিয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থাৎ নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছেন,সেখানে কেন আমরা সমান অধিকার এর দাবি করছি। আর যারা বলে যে ইসলাম নারীর অধিকার হরণ করেছে, মুসলিম নারীদের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া মানা তাদের জন্য বলবো আমাদের নবীজি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর ১ম স্ত্রী বিবি খাদিজা (রাঃ) আরবের বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন ছিলেন। ইসলাম মেয়েদের চাকরি বা ব্যবসার জন্য উৎসাহিত না করলেও মানা করে নি।
এবার আসি আমাদের সামাজিক অবস্থায় আমাদের দেশে নারী ৮ কোটি ৭ লাখ এবং স্বাক্ষরতা জ্ঞানসম্পন্ন নারীর সংখ্যা ৭১.৯৫%। কিন্তু এত জন নারীর মধ্যে ঠিক কত পার্সেন্ট নারী উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পায়?গ্রামের দিকে যদি হিসেব করেন দেখবেন ৮০-৮৫% মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। এবং এই বাল্যবিবাহ এর কারনে অকালে মৃত্যু ঘটে অনেক নারীর। আবার কিছু নারী ভাগ্যের করুন দশায় পড়ে জীবন কাটাতে থাকেন। এখন আপনার প্রশ্ন হতে পারে এর সাথে নারীর কর্মসংস্থান এর কি সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে। সম্পর্ক এই যে, আমরা সবাই জানি এবং বিশ্বাস করি যে জীবন মৃত্যু সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তার হাতে, এর মধ্যে কারো কোন হাত থাকে না।
কার মৃত্যু কখন সেটা কেউ জানে না।সেক্ষেত্রে একটা ১২ বছর বয়সে বাল্যবিবাহ এর শিকার গৃহিনী নারী ২৪ বছর বয়সে ৩ সন্তান নিয়ে বিধবা হলে তার ভবিষ্যত এর নিশ্চয়তা কে দিতে পারে? আজকে যদি তার শিক্ষার এবং কর্মের সেই সুযোগ থাকতো তাহলে কি ৩ সন্তানের জীবন বাঁচাতে তার মানুষের দারে দারে ঘুরার প্রয়োজন হতো? আজকে যদি ওই ৩ সন্তান কোন ভুল কর্মকাণ্ডে জড়িত হয় তাহলে কি দোষটা কি শুধু তাদের এবং তাদের মায়ের? মোটেও না সমস্যাটা আমাদের মানসিকতা এবং আমাদের সমাজের।
আমি সেই সব গৃহিনীদের প্রশ্ন করতে চাই যাদের স্বামী প্রচুর টাকা এবং সম্পত্তি জমা করছেন আপনাদের ভবিষ্যতের জন্য,আজ আপনার এত সম্পদ এত টাকা কাল যে এই সম্পদ আর টাকা থাকবে তার কোন গ্যারান্টি দিতে পারেন? গ্যারান্টি দিতে পারেন কোন দূর্ঘটনা সব এলোমেলো করে দিবে না? আপনি সকল সমস্যা নিয়ে এত চিন্তিত ঘরে চোর ঢুকলে কি করবেন,আগুন লাগলে কি করবেন সব কিছুর পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন অথচ আপনার সাবলম্বী হওয়া যে আপনার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সেটা নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। নিজের জন্য কেন আমরা আওয়াজ তুলে পারি না?কেন নিজের জন্য কথা বলতে পারি না?কেন নিজে দমে যাই? নিজেদের কথা নিজেরা বলতে হবে। আমরাই সমাজ,আজ যদি আমরা বদলাই ,আমাদের মানসিকতা বদলাই, তাহলেই বদলাবে পৃথিবী ,বদলাবে দেশ।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।